রোজার শারীরিক উপকার
প্রকাশিত : ১৫:১২, ২৫ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ১৬:৫৫, ২৫ এপ্রিল ২০২০
আমাদের অনেকের কাছে রামাদান তাঁর আধ্যাত্মিকতা হারিয়ে ইবাদাতের বদলে একটি প্রথাগত অনুষ্ঠানের রূপ লাভ করেছে। আমরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপোস থাকি শুধুমাত্র আমাদের আশেপাশের সবাই রোজা রাখে বলে। আমরা ভুলে যাই যে এই সময়টা আমাদের অন্তর ও আত্মাকে সকল প্রকার খারাপ কাজ থেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য আমরা দু’আ করতে ভুলে যাই, ভুলে যাই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদেরকে মুক্তি দান করতে। নিশ্চিতভাবে আমরা পানাহার থেকে বিরত থাকি কিন্তু সেটা কেবল লৌকিকভাবেই!
এই রোজার কিছু শারীরিক উপকার রয়েছে। আসুন সংক্ষেপে জেনে নেই রোজার শারীরিক উপকার :
আপনি সহজে বুড়ো হবেন না
রোজায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা। দীর্ঘ সময়ের রোজা শরীরের জন্যে অনেক বেশি উপকারি। আমাদের দেহকোষগুলোতে নিয়মিত টক্সিন বা বিষাণু সৃষ্টি হয় এবং এই দেহকোষগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত বাইরে থেকে খাবার পায়, সে খাবার খেতে থাকে। আর যত খাবার পাবে তত সে খেতে থাকবে। কিন্তু যখন দীর্ঘসময় আপনি রোজা রাখেন, তখন এই কোষগুলো বাইরে থেকে কোনো খাবার পায় না। ফলে সে ক্ষুধার্ত হয়ে যায়। আমারা যেরকম বেশি ক্ষুধা লাগলে খাবারের মান নিয়ে কোনো বাছবিচার করি না। যা পাই, তা-ই খাই। তেমনি দেহকোষগুলো যখন ক্ষুধায় আক্রান্ত হয়, তখন ভালো-মন্দ বিচার করে না। দেহের ভেতরে থাকা বিষাণুগুলোকেই তারা খেয়ে ফেলে। ফলে দেহের ভেতরে জমতে থাকা টক্সিনগুলো দূর হয়ে যায়। যে টক্সিনগুলো ছিল দেহের আবর্জনা, সেগুলোকেই দেহকোষ তখন হজম করে শক্তিতে রূপান্তরিত করে। এই প্রক্রিয়াটির তুঙ্গতম মুহূর্ত হচ্ছে রোজার ১২ থেকে ১৬তম ঘন্টা। তাই এবারের গ্রীষ্মে দীর্ঘ সময়ের রোজা শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারি হবে। মাঝে মাঝে অর্থাৎ বছরের অন্যান্য মাসেও এ ধারা যদি অব্যাহত রাখা যায় তবে আপনি সহজে বুড়ো হবেন না।
ওজন কমাতে পারবেন সহজে
ওজন কমানোর জন্য অনেকেই বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেন। না খেয়ে থাকাসহ বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করেন অনেকে। সে ক্ষেত্রে রোজাই উত্তম পন্থা। শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করতে রোজার বিকল্প নেই। অনেকে ইফতারে অনেক বেশি খেয়ে ফেলেন, ফলে খুব তাড়াতাড়ি মুটিয়ে যান। সংযমের মাস হলেও দেখা যায় অনেকেই এই মাসে বেশ কয়েক কেজি ওজন বাড়িয়ে ফেলছেন। ইফতারে ভাজা-পোড়া খাওয়াটা হয়েই যায়। তাই খেতে হবে অবশ্যই রয়ে সয়ে যেন ওজন না বাড়ে। বরং আমরা চাইলে সহজেই রমজানে কিছুটা ওজন কমিয়ে আনতে পারি। প্রয়োজন কেবল সঠিক ডায়েট প্ল্যান। প্রয়োজনীয় সকল খাদ্য উপাদান মিলিয়ে তৈরি করতে হবে এই ডায়েট প্ল্যান।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে
আপাতদৃষ্টিতে একজন সুস্থ ও সুনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের রোগীর রোজা পালন করতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু রমজান মাসে পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়ামের ধরণ ও ডায়াবেটিসের ওষুধ বা ইনসুলিনের পরিবর্তিত মাত্রা ও সময় সঠিকভাবে জেনে নিয়ে একজন ডায়াবেটিস রোগী রোজা পালন করতে পারেন।
তবে পুষ্টিমান ঠিক রেখে খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনলে ও শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামসহ স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালালে ঝুঁকি অনেকটাই কমবে।
কোলেস্টেরল কমায়
এ মাসে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে আনা সম্ভব। পেটের মেদ বা চর্বি অর্থাৎ ভুঁড়ি কমাতে এক মাসের ডায়েট যথষ্ঠে। সারা দিন না খেয়ে থাকার পর ইফতার ও সেহরিতে অনেক বেশি খাবার খাওয়া একেবারে উচিত নয়। এর ফলে ঝিমুনি ও ক্লান্তিবোধ হয়। এছাড়া পেটের বিভিন্ন ব্যাধি যেমন বদহজম, আমাশয়, ডায়রিরা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এসব ইবাদত-বন্দেগিতে প্রভাব ফেলে। দ্রুত খাবার খেলে অর্থাৎ চিবিয়ে না খেলে খাবার হজমে সমস্যা হয়।
ইফতারের দুই ঘণ্টা পর ডিকার্বোনেটেড পানীয় বা গ্রিন টি খেতে পারেন। দুই থেকে তিন লিটার পানি পানে অভ্যস্ত হন। ইফতারের পর ২০-৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন কিংবা তারাবির নামাজ আদায় করলেও দ্রুত ওজন কমানো সম্ভব হবে। বছরে অন্যান্য সময়ের মতো এ মাসেও সাধারণত ক্যালরি গ্রহণের চাহিদা একই থাকে। সুষম খাবার গ্রহণ করলে এ সময়েও ক্লান্তি অনুভব করবেন না।
ক্যান্সার ঝুঁকি কমায়
রোজা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার যেমন : স্টোন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি থেকে নিরাপদ রাখে। ভিন্ন এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রায় ‘আইজিএফ-১’ হরমোন আছে এমন একজন ব্যক্তিকে মাত্র ৩ দিন উপবাস রেখে সেই ‘আইজিএফ-১’ হরমোনের মাত্রা কমিয়ে ফেলা হয়েছে, যে ব্যক্তির কিনা প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি খুবই প্রবল ছিল।
এসএ/